হাফেজ মোহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:

রাখাইনে বর্বর সেনা হামলার ১৩ দিন পর গুলিবিদ্ধ হয়ে ১ নারী, ১ শিশু এবং ৩ জন রোহিঙ্গা কিশোর সীমান্ত অতিক্রম করে শুক্রবার রাতে টেকনাফে পৌঁছে। ৯ সেপ্টেম্বর সকালে আহতদের চিকিৎসার জন্য টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দেখা যায় পঁচন ধরে দূর্গন্ধ বেরুচ্ছে শরীর থেকে। স্বজনরা কোলে কাঁধে করে তাদেরকে নিয়ে আসতে সক্ষম হলেও জীবনের আশংকা কাটেনি তাদের। গুলিবিদ্ধ ৩ জন রোহিঙ্গা হচ্ছেন বুচিডংয়ের রাচিদং এলাকার ইমাম শরীফ (১৭), আবুদল করিম (১৮), মংডু বড়ছড়ার ইব্রাহীম (২২) জমিলা খাতুন (৩২) ও ইতিলার গোঁয়াইং গ্রামের মোঃ সাফাত (৮)।

এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ আবদুল করিমকে ভাইয়েরা কাঁধে বহন করে ১৩ দিন পায়ে হেঁটে সীমান্ত অতিক্রম করেন। একটি ঝুড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে পায়ে ও হাতে গুলিবিদ্ধ আবদুল করিমকে পাহাড় জঙ্গল ডিঙ্গিয়ে খাল বিল পার হয়ে এপারে আনতে গিয়ে নিজেরাও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় খাবার ও পানির সংকটে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটান তারা। আবার সেনাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘ সীমান্ত অতিক্রম করে এপারে পৌঁছেন তারা। শুক্রবার ৮ সেপ্টেম্বর রাতে তাকেসহ অন্যান্যদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর আইওএম এর তত্বাবধানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় বলে জানান টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুমন বডুয়া।

গুলিবিদ্ধদের স্বজনরা জানিয়েছেন, ২৫ আগস্ট বর্মী সেনাদের নির্বিচারে গুলি থেকে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। পরে আহতাস্থায় পাহাড়ে অবস্থান করে। সেখান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করতে এতদিন লেগেছে। বর্তমানে আহতদের আইওএম’র হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমারের মংডু বড়ছড়া এলাকায় পঞ্চাশ জনের এক দল সেনা জড়ো হয়ে এ এলাকার অনেক লোককে গুলি করে হত্যা, যুবতী মেয়েদের অপহরণ করে। সাথে অধিকাংশ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় পালাতে গিয়ে ওই এলাকার যুবক ইব্রাহীমকে (২২) লক্ষ্য করে রকেট লাঞ্চার ছুঁড়ে। লাঞ্চারের আঘাতে তাঁর ডান পা জর্জরিত হয়ে যায়। দুই দিন ব্যাথায় কাতর থেকে তাঁর স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা নুরজাহান ও শ্বশুরসহ ১১ জনের পরিবার ৩ দিন অতিবাহিত করে এপারে অনুপ্রবেশ করে বলে জানান আহতের শ্বশুর নুরুল ইসলাম। এপারে আসতে গিয়ে হাবিরছড়া নৌকার মাঝি সাইফুল্লাহকে দিতে হয়ে জন প্রতি ১০ হাজার টাকা। আহত ইব্রাহীমকে টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ভর্তি করা হয়েছে।